সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি প্রশাসনিক নির্দেশের মাধ্যমে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে সরকারের নেয়া সিদ্ধান্ত ‘সমর্থন করেন না’। তিনি বলেন, এটা করা ঠিক হবে না। ব্যক্তিগতভাবে বহুদলীয় রাজনীতিতে বিশ্বাস করি। যদি তাদেরকে ক্ষতিকারক মনে করা হয়, জনগণ তাদের বর্জন করবে এবং আস্তে আস্তে তারা জনগণ থেকে হারিয়ে যাবে। এটাই হবে স্বাভাবিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়া।’ গতকাল বুধবার বিকালে ঢাকা থেকে বিমানযোগে নীলফামারীর সৈয়দপুর বিমানবন্দরে অবতরণ করে সরাসরি রংপুর সার্কিট হাউজে এসে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় কালে তিনি এ কথা বলেন। জি এম কাদের বলেন, তবে জোর করে কিছু করতে চাইলে জামায়াত-শিবিরের যদি সাংগঠনিক কাঠামো থাকে তারা আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যেতে পারে। এতে দেশে অস্থিতিশীল অস্বাভাবিক রাজনীতির বীজ এখান থেকে বপন হতে পারে- সেটা সামনের দিকে বাড়তে পারে। তিনি বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের আগে পরে যতবার বিএনপি আর জামায়াত-শিবিরের কথা সরকারের বলেছে আমি বিভিন্ন স্তরের মানুষ এবং ঢাকার বিভিন্ন পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে বুঝেছি- সরকারের এই অভিযোগ দেশের সাধারণ মানুষ গ্রহণ করেনি। এবারের আন্দোলন ছিল জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন। এই আন্দোলনে বিএনপি-জামায়াত ও জাতীয় পার্টির কেউ কেউ থাকে তারা ব্যক্তিগতভাবে মানুষ হিসেবে সেখানে ছিল। তা ছাড়া আন্দোলনের ব্যাপারে বিএনপি-জামায়াতের এজেন্ডা সরকার এখনও প্রমাণ করতে পারেনি। দেশের জনগণ এসব আর গ্রহণ করছে না। সরকারের কাছে প্রশ্ন রেখে সংসদের বিরোধী দলের নেতা বলেন, এবার নির্বিচারে গণহত্যা করা হলো কেন? তারা যদি সত্যিকারভাবে সন্ত্রাস দমন করতে চায় তাহলে তাদের চিহ্নিত কেন করা হলো না। এটা করলে প্রতিহতের প্রশ্ন আসে। কিন্তু হেলিকপ্টার ও বড় বড় ভবন থেকে সাধারণ মানুষকে লক্ষ্য করে বেপরোয়া গুলি বর্ষণ করা হলো- শিশু, গৃহিণীরাও রেহাই পায়নি। আসলে সরকার ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে তাদের মতামত চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। সেই পরিস্থিতি থেকে দেশ এখনও উদ্ধার হয়নি। তিনি বলেন, কোটা সংস্কারের জন্য জনগণ তাদের সন্তান-স্বজন মিলে আন্দোলনে অংশ নিয়েছে। আমার জীবনে এরকম গণআন্দোলন দেখিনি। তিনি রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যার তীব্র নিন্দা জানিয়ে তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন। জি এম কাদের, শিক্ষার্থীদের দাবি যৌক্তিক। কোটা বাতিল করা হলেও আবার কোর্টের মাধ্যমে তা পুনর্বহাল করলো। শিক্ষার্থীরা বুঝতে পারলো সরকারের ইন্ধনে এটা হচ্ছে। সরকার আবার কোটা পুনর্বহাল করেছে নিজেদের দলীয় স্বার্থ ও ব্যক্তিগত স্বার্থ লাভবান হওয়ার জন্য। ফলে ছাত্ররা এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ালো। ন্যায্য দাবিতে চলা আন্দোলন দমানোর জন্য সরকার ও সরকারের অঙ্গ সংগঠনগুলো অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে পুলিশের সহায়তায় তাদের ওপর নির্যাতন শুরু করলো। তখন ছাত্ররা এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। সেই প্রতিরোধ আন্দোলনে সাধারণ জনগণ তাদের ছেলে-মেয়ে স্বজনদের সবাইকে নিয়ে সরকারের লেলিয়ে দেওয়া সন্ত্রাসীদের প্রতিরোধে মাঠে নেমেছিল। তিনি বলেন, এবারের আন্দোলন ছিল জনগণের সমর্থন করা দাবি আদায়কে এগিয়ে নেওয়ার আন্দোলন। এটা একটা অভূতপূর্ব অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। জীবনে অনেক আন্দোলন সংগ্রাম দেখেছি, কিন্তু এবারের আন্দোলন ছিল সরকারের দমন পীড়নের বিরুদ্ধে ক্ষোভের বহির্প্রকাশ। কারণ জনগণ নানাভাবে বঞ্চনা আর বৈষম্যের শিকার হচ্ছিল। সবগুলো একসঙ্গে যুক্ত হয়ে সব শ্রেণিপেশার মানুষ মাঠে নেমে গিয়েছিল ছাত্রদের সঙ্গে। সরকার এটাকে বিভিন্নভাবে বোঝানোর চেষ্টা করেছে, একটা সন্ত্রাসী গোষ্ঠী এই কাজ করেছে। কিন্তু সরকারের এসব কথা জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে। জাতীয় পার্টির এই নেতা বলেন, সরকারের দলীয় ক্যাডার বাহিনী ও সরকারি দলের লোকেরা হেলমেট পরে বিভিন্নভাবে মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের সহযোগিতা করেছে- এটা অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। তারপরও এ ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে সরকার। আমি মনে করি, দেশের জনগণ এ প্রচেষ্টাকে কখনই সমর্থন করবে না। তাদের কথা জনগণের কাছে কখনই গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। তিনি বলেন, এর মাধ্যমে বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমাদের সন্ত্রাসী রাষ্ট্র বলা হচ্ছে। দেশের অর্থনীতির ব্যাপক ক্ষতি করা হয়েছে। দেশের এই নাজুক পরিস্থিতিতে সব রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজসহ সবাইকে নিয়ে আলোচনা করে কীভাবে সমস্যার সমাধান করা যায় সেভাবে দেখা দরকার। তা নাহলে সামাজিক অস্থিরতা আরও বাড়বে। সারা বিশ্বে আমরা সন্ত্রাসী রাষ্ট্রের তকমা নিতে হবে।

জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করা ঠিক হবে না-জিএম কাদের
- আপলোড সময় : ০১-০৮-২০২৪ ১২:৩৩:৪০ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ০১-০৮-২০২৪ ১২:৩৩:৪০ পূর্বাহ্ন


নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ